মত ও দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই
”তোমাদের যা খুশি নিয়ে নাও, আমাকে শুধু আমার দেশের মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার ও কাজ করার সুযোগ দাও।”
– মনজুরুল ইসলাম মেঘ
আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা। আমি সেই আন্দোলনের একজন সংগঠক। ৪ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে কোন পরিস্থিতিতে এই ইভেন্ট ক্লোজ করেছিলাম, তা বুঝতে হলে আপনাকে আপনার জীবন অথবা আন্দোলন যে কোন একটি বেছে নিতে হলে আপনি যা করবেন আমিও ডিবি কার্যালয়ে সেটিই করেছিলাম।
কালচারাল পলিটিক্সের অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো CinemaKing International Film Festival যার ভিত্তি আমি করেছিলাম ৩ আগস্ট ২০১৮ সালে ডিবি কর্তৃক আটকের আগে। নাম দিয়েছিলাম নিরাপদ সড়ক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা, কিন্তু প্রশাসন আমাকে সেটি করতে দেয়নি। যার কারণে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করি, যেনো আওয়ামী সরকার বন্ধ করতে না পারে, কারণ ঐদিন ছিলো বড় দিন। যদিও সেটা আর এক ইতিহাস, সহজ ছিলোনা আয়োজন করার। নিপিড়নের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে।
মহান আল্লাহর কি লিলাখেলা ৬ বছর পরে ৪ আগস্টের পরের দিন ৫ আগস্টেই আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। ৬ বছর আগে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের ডিবি আমাকে নির্যাতন করেছে আর ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট আমি পায়ে সর্বশেষ আঘাত পেয়েছি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের হাত থেকে পালাতে রাস্থার ডিভাইডার থেকে পড়ে। ঠিক তার পরের দিনই আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলো। জনগনের জয় হলো। রিভেঞ্চ ফিরে আসে। আমি এই লেখা কোন ক্রেডিট নিতে লেখছিনা, আমি বলতে চাইছি, কালচারাল রেভুলেশন ছাড়া কোন বিপ্লব হয়না, জিও পলিটিক্স ছাড়া বিপ্লব সফল হয়না, কালচারাল উইং ছাড়া কোন সরকার ঠিকে থাকতে পারেনা। গত ১৬ বছর ই টানা আওয়ামী দুর্গকে হিট করে গেছি আমি কালচারাল বয়ানে, জনগনের ন্যারিটিভে। যার কারণে আমার নামে চলচ্চিত্র অনুদান গেজেট হলেও আমাকে অবৈধভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
যদি প্রশ্ন করি, বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী কালচারাল হেজিমনির বিরুদ্ধে আামর প্রতিষ্ঠিত যতগুলি প্রতিষ্ঠান দেশে এবং বিদেশে কাজ করেছে, ততগুলি কালচারাল প্রতিষ্ঠান বা উইং কি কোন রাজনৈতিক দলও নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে ? এটা বললে কি খুব বেশি বলা হবে?
আসুন ডিবেট করি প্রমাণ নিয়ে।
আপনারা জানেন ২০১২ সালে আমার প্রতিষ্ঠিত World News of Bangladesh অনলাইন পত্রিকা আওয়ামী লীগ বন্ধ করে দিয়ে ছিলো, আমার নামে মামলা ছিলো, আমি গ্রেফতার হয়ে আটক ছিলাম। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পরে সেই আদি ডোমেইনেই পত্রিকাটি চালু করেছি। এই পত্রিকা যখন প্রতিষ্ঠা করি তখন আমার বয়স ছিলো ১৮ বছর, ১১ মাস। আজকের দিনে অনলাইন পত্রিকা হয়তো কিছু না, চাইলেই করা যায় কিন্তু ১ যুগ আগে অনলাইন নিউজ পোর্টাল মানে কি নিশ্চয় গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা জানেন।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত MEGH Foundation এর কার্যক্রম প্রকাশ্যে পরিচালনার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে স্পৃক্ততা থাকার কারণে। এই কারণে ২০১৮ সালের পরে আপনারা প্রকাশ্যে কোন প্রোগ্রাম দেখতে পাননা। অথচ ১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত বহু সামাজিক কাজ করেছি আমরা। ২০২৩ সালে নিবন্ধনের জন্য আরজেএসসি তে আবেদন করি, নিবন্ধন দেওয়া হয়নি আমাকে। উল্টা এনএসআই ফলো করতে শুরু করে।
সিনেমাকিং আন্তর্জািতিক চলচ্চিত্র উৎসব, বেঙ্গল আদি সংস্কৃতি উৎসব, মোরালুক সাহিত্য উৎসব, সাহিত্য আসার, মঙ্গল সভা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সেমিনারসহ বহু প্রোগ্রাম করেছি আমার এই ফাউন্ডেশন থেকে, এখনো করে যাচ্ছি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট আমরা প্রতিষ্ঠা করি গণঐক্য-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যা সাংস্কৃতিক বয়ানে আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে কাজ করে। ১০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মিডিয়াতে প্রচার করার কথা থাকলেও আওয়ামী গোয়েন্দা সংস্থা আগেই জেনে যায়, আমরা গোপানে কাজ করেছি।
আমার স্পষ্ট কথা, জনগনের পক্ষে কথা বলতে দিতে হবে জনগনকে। মানুষ যখন কথা বলতে পারেনা তখন মানুষ আর পশু-পাখির মধ্যে কোন প্রার্থক্য থাকেনা। মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে একই সাথে দ্বি-মত প্রকাশ করার স্বাধীনতাও দিতে হবে। মানুষ যে দিন থেকে কথা বলতে পারেনা সেই দিন থেকে মূলত মানুষ আর জীবিত থাকেনা অর্ধমৃত হয়ে যায়। মানুষ যখন দ্বিমত প্রকাশের স্বাধীনতা হারায় তখন মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়, মৌলিক অধিকার হারায়।
রাজনীতি যার যার, দেশ সবার। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট যে ইভেন্ট আমি ক্লোজ করেছিলাম, সেই ইভেন্টে কয়েক মিলিয়ন রিচ ছিলো, অংশগ্রহণ করেছিলো প্রায় ৪০K এর বেশি। লিংক দিলাম কমেন্টে, একটি ইতিহাস দেখে আসুন।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনের অগ্রসৈনিকদের অনুরোধ করে বলবো, আপনারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনাদের জাতি চিরদিন মনে রাখবে। কিন্তু একটি কথা ভুলে যাবেন না, আপনারা সমানে থাকলেও পিছনে যারা ঢাল ছিলো, তাদের দূরে রাখবেন না। মনে রাখবেন দুর্গ নির্মাণের চেয়েও শক্ত কাজ দূর্গ পাহারা দেওয়া। কালচারাল ফোর্স তৈরি করুন, আমরা কালচারাল ন্যারেটিভ তৈরী করতে সহযোগিতা করবো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, কত কমিশন হলো, কত কমিটি হলো। এই গরিব দেশে প্রথম দরকার ছিলো এগ্রিকালচারাল কমিশন, তারপরে দরকার ছিলো কালচারাল কমিশন, আমার জানামতে এই দুটি কমিশনের একটিও হয়নি। কারণ ক্ষমতায় যারা গেছে, তারা তো চিন্তাও করেনি দেশ রক্ষা করতে হলে পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য দরকার খাবার, মনের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দরকার সংস্কৃতি চর্চা। ক্ষুধার্ত জনগন সুস্থ হয়না, না শারিকি, না মানুষিক। একটি ক্ষুধার্ত জাতির মধ্যে আপনি সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার জন্য নিয়ম বেধে দিলে ই তো তারা নিয়ম মানবে না। আগে ক্ষুধা নিবারণ করুন।
খুব শিঘ্রই আমি কৃষি কমিশন ও সংস্কৃতি কমিশন বিষয়ক একটি রাজনৈতিক বই প্রকাশ করবো। বইটি পড়ে যদি একজন মানুষের চোখে পানি আসে, সৎপথে পরিচালিত হবার স্বপ্ন দেখে তাতেই আমার চলবে, যদিও বইটি প্রকাশিত হলে রাজনীতিবিদদের জ্বলবে।
মানুষকে ভালোবাসুন, মানুষ আপনাকে দ্বিগুন ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবে। যে মানুষকে ভালোবাসতে পারেনা তার থেকে বড় হতভাগা আর কেউ নেই। ভালবাসার প্রতিদানে ভালবাসতে না পারার চেয়ে বড় কষ্ঠ আর পৃথিবীতে নেই। আমার সম্পদ বলতে আছে শুধু মানুষের ভালোবাসা।




