আমার ইফতার পাওনা থাকলো : তারেক রহমান
মনজুরুল ইসলাম মেঘ : একজন রোজাদার মুসলমানের কাছে প্রত্যেকদিন ইফতারের পূর্বমুহূর্ত অত্যান্ত আনন্দের। সারাদিন যাবতীয় পানাহার ও নির্দিষ্ট আহকাম পালন শেষে যখন ইফতার করতে বসেন, তখন মহান আল্লাহ রোজাদারের দোয়া কবুল করেন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তৎকালিন সিনিয়র ভাইচ চেয়ারম্যান) দেশনায়ক তারেক রহমান কে নির্যাতন করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার, যার কারণে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৬ বছর লন্ডনে অবস্থান করায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের সাথে ইফতার করা থেকে বঞ্চিত।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সংগ্রামের অগ্রপথিক, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তরুনদের আইকন, লক্ষ লক্ষ তরুন রাজপথে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে বিগত ১৬ বছর, জুলাই বিপ্লবে সবচেয়ে বেশি জীবন উৎসর্গ করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আছেন বাংলাদেশের জনগনের ঘরে ঘরে, তিনি হয়তো ইফতার করেন লন্ডনে, কিন্তু তিনি স্বয়নে স্বপনে বাংলাদেশের মেহনতি সাধারণ মানুষের সাথে ইফতার করেন প্রতিদিন ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়। তিনি মনে প্রানে অংশগ্রহন করেন দিনাজপুরের জনৈক কৃষকের পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারের পান্তা ভাতে (পানি ভাতে), চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের মায়ের সাথে ইফতারের শরবতে, রাজধানীর রিক্সা চালকের ইফতারের একটি খেজুরে, মাগুরায় ধর্ষনে নিহত আছিয়ার বোনের ইফতারের এক মুঠি মুড়িতে, তিনি বসে পড়েন অসহায় দুঃখীনি মায়ের ইফতারে। তিনি মহান নেতা, তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শের নেতা, তিনি বাংলাদশী জাতীয়তাবাদের নেতা, তিনি গণমানুষের নেতা, তিনি বাংলাদেশীদের আশা ভরসার আশ্রয়, তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান, পিতা-মাতার মতই কমল হৃদয়ের অধিকারি। তিনি মানুষকে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত ভাবে কাজ করছেন।
কমল হৃদয়ের আধুনিক বিশ্বের আইকনিক নেতা তারেক রহমান নেতাকর্মীদের যে ভাবে সম্মান ও ভালোবাসায় সীক্তকরেন তা পৃথিবীতে বিরল। গত ১৭ মার্চ জিয়া সাইবার ফোর্স- জেড সি এফ আয়োজন করে “জাতীয়তাবাদী অনলাইন এক্টিভিস্টদের সম্মানে ইফতার”। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বক্তিতা শেষে তিনি অনলাইন এক্টিভিস্টদের উদ্দেশ্যে বলেন “আপনাদের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা এবং সমর্থন আমাদের দলের প্রয়োজন, অতীতের যে কোন সময়ের থেকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন”। একজন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতা, তিনি তাঁর নেতাকর্মীদের কাছে এমন প্রত্যাশা করবেন এটাই সাভাবিক।
কিন্ত আগামির নতুন স্বপ্নময় বাংলাদেশের যিনি যাবতীয় আকাঙ্খা বাস্তবায়নের জন্য ৩১ দফ রুপ রেখা দিয়ে বিশ্বে সমাদিত হয়েছেন, প্রংশসিত হচ্ছেন, তিনি ই পরম মমতা দিয়ে বললেন “আমার অনলাইন এক্টিভিস্টদের কাছে, আমার পাওনা থাকলো আমার ইফতার”। তার এই অমর আপদার বিএনপির অনলাইন এক্টিভিস্টদের হৃদয় নাড়ি দিয়েছে, অশ্রসিক্ত হয়েছে প্রত্যেক এক্টিভিস্টদের হৃদয়। প্রিয় নেতাকে সুদূর প্রবাসে রেখে মনবেদনায় কাটে প্রত্যেক বছর ইফতার। সেই বেদনা ভূলার নয়। বিএনপির অনলাইন এক্টিভিস্টরা শপথ নিয়েছেন, আগামি রমজানের প্রথম ইফতার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বিপ্লবের মহানায়ক তারেক রহমানের সাথে করবেন।
ঐ ইফতার অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেছেন “নির্বাচনে জেতার জন্য বিএনপির যত বেশি সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তত বেশি বিএনপিকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে।” অনলাইন এক্টিভিস্টরা রুখে দিবে বিএনপির বিরুদ্ধে যাবতীয় মিডিয়া ট্রায়াল। বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের বাহিরেও অনলাইন এক্টিভিস্টরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে, খাজত খেটেছে। অনেকের নামে ছিলো মিথ্যা ডিজিটাল মামলা। তবুও সাইবার ওর্য়াল্ডে বিএনপির পক্ষে অতন্দ্র পাহারায় কাজ করেছে অনলাইন এক্টিভস্টরা। জাতীয়তাবাদের আদের্শে অনুপ্রানিত “জিয়া সাইবার ফোর্স- জেড সি এফ” সবচেয়ে বেশি সংগঠিত ও সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী আর্দেশের অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন। এর বাহিরেও হাজার হাজার অনলাইন এক্টিভিস্ট আছে বিএনপির। সবার উদ্দেশ্যেই তারেক রহমান বলেছেন, “ব্যক্তিগত কোন দ্বন্দ থাকলেও আমরা সবাই জাতীয়তাবাদের আর্দেশের জায়গাতে এক।” তিনি জাতীয়তাবাদী অনলাইন এক্টিভিস্টদের অবগতি করেছেন, আপনারা এমন কোন কাজ করবেন না যাতে বিএনপির ক্ষতি হয়, বরং আপনারা সেই কাজ করবেন যাতে বিএনপির ইমেজ (মর্যাদা) বৃদ্ধি পায়।
দেশে বর্তমানে তরুন ভোটার সবচেয়ে বেশি, যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের ৩ টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, তারা আসন্ন ত্রয়দশ জাতীয় সংসদে প্রথম বার ভোট দিবে। এই ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। এই ভোটাররা গ্লোবাল ভিলেজের সদস্য, এর একটি অংশ জেনজি, তরুনরা ভার্চুয়াল জগতে এক্টিভ থাকে, তরুনরাই বেশি অনলাইনে এক্টিভিস্ট। এই তরুণ ভোটারদের যারা টার্গেট করে এগিয়ে যেতে পারবে তারা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি সফল্য অর্জন করবে। এই তরুন ভোটাররা বিলবোর্ড, পোষ্টার, ব্যানার দেখে নেতা নির্বাচন করেনা, এই তরুন ভোটাররা শিক্ষিত, তারা সারা পৃথিবী জানেন, এই ভোটাররা অনলাইনে এক্টিভ থাকেন। অনলাইন থেকেই ভালো মন্দ জেনে নিয়ে ভালো কাজে সমর্থন দেয়। যেটি আমরা জুলাই বিপ্লবে প্রত্যক্ষ করলাম। আমাদের শিখতে হবে ইতিহাসের বিজয় থেকে, রাজপথের লড়াই থেকে।
বিএনপির জনপ্রিয়তা এই মূহর্তে বাংলাদেশের সবগুলি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তার সমানুপাতিক। কিন্তু তবুও বিএনপিকে জোরদিতে হবে “ভার্চুয়াল ভোট ব্যাংকে”। ভার্চুয়াল জগত মানেই ফেসবুক পোষ্ট বা দুই লাইন স্ট্যাটাস লেখা নয়। অনলাইন এক্টিভিস্টদের তথ্য-উপাত্ত সঠিক ভাবে বিশ্লেষন করতে হবে, থাকতে হবে তুলনামূলক ব্যাখ্যা ও গবেষণা। বিএনপির অনলাইন এক্টিভস্টরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে নিশ্চয় অনেক বড় বড় কাজ করছেন, তবে সেই গুলি বিচ্ছিন্ন ভাবে। এই কাজগুলি যদি একটি গোছানো জায়গা থেকে করা যায়, তাহলে মাঠের রাজনীতিতে বিএনপির যে শক্ত অবস্থান, ঠিক একই রোকম শক্ত অবস্থান হবে ভার্চুয়াল জগতে।
আগামি বিশ্ব তাদের দখলে থাকবে, যাদের দখলে থাকবে ভার্চুয়াল জগৎ। অনলাইন এক্টিভিস্টরা সত্য তুলে ধরে যে কোন ধরণের অপতথ্য রুখে দিতে পারে। ভার্চুয়াল মিডিয়ার গুরুত্ব অনুধাপন করে বিএনপির নীতিনির্ধারক তথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যত দ্রুত অনলাইন সহযোগি সংগঠনের আত্নপ্রকাশ করবেন, ততদ্রুত বাংলাদেশের মঙ্গল হবে। বিএনপির হয়ে অনলাইনে সক্রিয় ভাবে সাংগঠনিক পদ্ধতিতে দেশে প্রবাসে কাজ করে যাচ্ছে জিয়া সাইবার ফোর্স-জেড সি এফ। সংগঠনটির ১০ম বর্ষপর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রথমবার অনলাইন এক্টিভিস্টরা কাছে পেয়ে দীর্ঘ দিনের জেল, জুলুম, মামলা, হামলা সব কষ্ট ভুলে গেছে।
২০১২ সাল থেকে বিএনপির অনলাইন এক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করছি, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ছিলো বগুড়া থেকে প্রচারিত আমার সম্পাদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল “ওয়ার্ল্ড নিউজ অফ বাংলাদেশ” মিথ্যা মামলায় হাজতে ছিলাম ২০১৭ সালে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে চলচ্চিত্র অনুদান আমার নামে গেজেট হবার পরে অতীতের রাজনৈতিক মামলার কারণে অন্যায় ভাবে আমাকে বাদ দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকার। আমার বিরুদ্ধে জুলুমবাজ কিছু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে প্রচার করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার, তবুও বিএনপির কার্যক্রম থেকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি আমাকে, বিসর্জন দেইনি জাতীয়তাবাদী নীতি ও আদর্শ।
২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারী পথসভায় বগুড়ার নন্দিগ্রামে বক্তিতায় আওয়ামী সরকারের পতনের ডাক দিয়েছিলাম, ফেসবুক লাইভ হয়েছিলো, বক্তিতার সেই ভিডিও ফ্যাসিস্ট সরকার ডিলেট করলেও এখনো ভাইরাল ক্লিপ অনলাইনে পাওয়া যায়। ডিবি হেফাজতে আটক ছিলাম ২৮ জানুয়ারী পর্যন্ত। জুলাই বিপ্লব শুরু হলে ১১ জুলাই সর্বশেষ আইসিটি মামলা হয় আমার নামে, আন্দোলন চলাকালীন ৪ আগস্ট ঢাকার সাভারে পা ভাঙ্গে পুলিশের গুলির সামনে থেকে আত্নরক্ষার সময়। দীর্ঘ এই পরিক্রমায় আমাদের অনলাইন এক্টিভিস্টদের কোন দলীয় স্বীকৃতি নেই, আমরা কোন দিন স্বীকৃতি চাইওনি। তবুও এক বুক আশা নিয়ে আমাদের দীর্ঘ দিনের যে কষ্ঠ ছিলো তা নিমিশে শেষ হয়েছে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আবেকময় বক্তিতায়, তিনি বলেছেন “আমার অনলাইন এক্টিভিস্টদের কাছে আমার পাওনা থাকলো আমার ইফতার”।
সারা দিনের কর্মক্লান্ত শেষে রাতের প্রশান্তি ঘুমের পরে সকালবেলা দুর্বাঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু, পূর্বদিগন্তে সোনালী রোদের আভা আর দখিনা বাতাসে দোলখাওয়া ধানের র্শীষ, ফসলের মাঠে হেঁটে যাওয়া কৃষকের গলা থেকে ভেসে আসা বেসুরো গানের যে আনন্দ বাতাসে ধ্বনিত হয়, সেই রোকম আনন্দ ধ্বনিত হচ্ছে জাতীয়তাবাদী অনলাইন এক্টিভিস্টদের হদয়ে। সকল অনলাইন এক্টিভিস্টরা প্রত্যাশায় থাকলেন, আগামি বছর লক্ষ এক্টিভিস্ট সম্মিলতি ভাবে দেশনায় তারেক রহমানের সাথে ইফতার করবেন, রমজানের প্রথম রোজায়।
লেখক :
কারানির্যাতিত অনলাইন এক্টিভিস্ট, চলচ্চিত্র পরিচালক, সাংবাদিক,
ভাইচ চেয়ারম্যান, জিয়া সাইবার ফোর্স-জেড সিএফ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
আহ্বায়ক, মিডিয়া উপ-কমিটি, জাতীয়তাবাদী অনলাইন এক্টিভিস্টদের সম্মানে ইফতার ২০২৫।