‘কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠনের জন্য ‘বাংলাদেশ ভুমিহীন আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা

খবর বিজ্ঞপ্তি : ‘কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বরাবরে প্রস্তাবনা পেশ করে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন। ২১ অক্টোবর ২০২৪ সোমবার দুপুর বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সেখ নাছির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছামিউল আলম রাসু, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক মো. আব্দুল মজিদ অন্তর বাংলাদেশ সচিবালয়ে গিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে এ প্রস্তাবনা পেশ করেন। এ সময় তারা মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

ভূমিহীন আন্দোলনের প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও কৃষিভিত্তিক দেশ। অধূনা শিল্প, সেবা, জনশক্তি রপ্তানীসহ নানাবিধ খাত এগিয়ে আসায় কৃষির ভূমিকা কিছুটা কমে আসলেও সবচাইতে প্রাথমিক এবং মৌলিক খাত হিসাবে কৃষির অবদান এককভাবে এখনো সবচেয়ে বেশি। আমাদের কৃষি চলছে দৃশ্যত পরিকল্পনাহীন পরিকল্পনা দিয়ে। কৃষি ব্যবহৃত হচ্ছে লাভজনক কর্মে যুক্ত হওয়ার সুযোগবঞ্চিতদের শ্রম এবং লাভজনক খাতে বিনিয়োগের সুযোগবঞ্চিতদের বিনিয়োগকৃত পুজি আত্মসাৎ করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে। এই আত্মসাৎকরনের মুল হাতিয়ার হলো বাজার ব্যবস্থার উপর রাজনৈতিক মাফিয়াদের জবাবাদিহিীন একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন বা কর্তৃত্ব। কৃষিক্ষেত্রে আত্মসাৎকারীদের বিশেষ সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে গ্রাম জীবনের সংস্কৃতি। কৃষকের কাছে কৃষি এখনো কেবলমাত্র মুনাফাক্ষেত্র নয়, জীবন প্রণালীও। আর কৃষক কেবলমাত্র জমির মালীক নয়, গ্রামে বসবাসকারী বা গ্রাম সংলগ্ন ভূমিহীন, অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের সকল ধরনের শ্রমিকেরাও সাংস্কৃতিকভাবে কৃষক।

আমাদের নানাবিধ ফসলের পাশাপশি মাছ, মাংস, দুগ্ধ, চা, চামড়া, পাটজাত পণ্যসহ নানাবিধ কৃষি উপকরনের হিসাব করলে এখন পর্যন্ত কৃষিই এখানকার একক বৃহত্তম মৌলিক জাতীয় আয় ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। কিন্তু মাফিয়া সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এখানকার ভূমির স্বাস্থ্য, খাদ্যচক্র, নদনদী—বিল—বাউর, প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র, ভূগর্ভস্থ এবং ভ—ুউপরিস্থিত পানি, জীব বৈচিত্র, বন—বাদার সবই ধ্বংসের পথে। কৃষির সাথে জড়িত কৃষকদের অর্থনৈতিক এবং শারিরীক অবস্থা ভয়াবহ,— এর মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ হলো ভূমিহীন নারী—পুরূষ কৃষকদের অবস্থা।

বাংলাদেশের এবারের গণঅভ্যূত্থান, বৈষম্যমুক্তির যে দাবীকে সামনে এনেছে, তার প্রতি ন্যুনতম সুবিচার করতে হলে সর্বাগ্রে এখানে এই ভূমিহীন নারী—পুরুষদের জন্য বর্তমান বাস্তবতায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করা সম্ভব তা নিরূপণ করা সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে কৃষি, কৃষক ও ভূমিহীনরা কোন প্রকার আলোচনাতেই নাই অথচ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম, মর্যাদাপুর্ণ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা ও টিকিয়ে রাখার প্রথম শর্ত হলো খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করা।

এই বাস্ততাকে বিবেচনায় রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের অপরাপর ক্ষেত্রের পাশাপাশি ‘কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠন করার জন্য জোড় দাবী জানাচ্ছি। ইতিপুর্বে আমরা সারাদেশের ভূমিহীন এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তাদের মতামতের ভিত্তিতে যেসব দাবী—দাওয়া তুলে ধরেছিলাম তা আবারও এর সাথে যুক্ত করে দিচ্ছি।

ছাত্র—জনতার অভ্যুত্থান পরবতীর্ বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়নে ভূমিহীন কৃষকদের প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
১) কৃষি, কৃষক এবং ভূমিহীনদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভূমিহীন প্রতিনিধিদের অন্তর্ভূক্ত করে একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে ।
২) ভূমি সংস্কার, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং প্রকৃতিবান্ধব অধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রচলনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
৩) খাসজমি যথাযথভাবে চিহ্নিত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) খাল—বিল—জলাশয় অগ্রধিকার ভিত্তিতে প্রকৃত ভূমিহীন জেলে—কৃষকদের মধ্যে বরাদ্দ দিতে হবে এবং বরাদ্দ কমিটিতে ভূমিহীনদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৫) হাউজিং ও রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার নামে দরিদ্র এবং নিরীহ জমির মালিকদের জমি দখল, নামমাত্র নামে বিক্রয়ে বাধ্য করেছে এমন জবর দখলকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এইসব ব্যবসার নামে সাধারন মানুষদের উচ্ছেদ করে গৃহহারা, জমিহারা না করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) উন্নয়নের নামে আইন অমান্য করে তিন ফসলী জমি অধিগ্রহন বন্ধ করতে হবে। ইতিমধ্যে অধিগ্রহনকৃত এমন প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
৭) সংবিধানে উল্লেখিত ‘স্থানীয় শাসন’ পরিবর্তন করে প্রকৃত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ বাতিল করতে হবে।
৮) সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ সকল কমিশনে ভূমিহীন কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে।
৯) জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ‘সংবিধান সংস্কার সভা’র নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধানের গণক্ষমতা তান্ত্রিক সংস্কার করতে হবে।

Share