খননের নামে লুটপাট ও ব্রহ্মপুত্রের সর্বনাশ বন্ধের দাবি

খবর বিজ্ঞপ্তি : খননের নাম লুটপাট ও ব্রহ্মপুত্র নদের সর্বনাশ বন্ধের দাবি জানিছে ব্রহ্মপ্রত্র সুরক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংগঠন।

২০ নভেম্বর, বুধবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি সরকার আজিজ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য সচিব আশকর আলী প্রমুখ।

 লিখত বক্তেব্যে দাবি করা হয়, নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি এবং প্রাণ-প্রকৃতি নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী আমাদের শরীরে রক্তপ্রবাহের মতো প্রাণদায়ী। ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের পানির প্রধানতম উৎস এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের অপরাপর নদনদী, খালবিল ও জলাশয়গুলো পুরাতন ব্রহ্মপুত্রর উপর নির্ভর। কাজেই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র একটি মাতৃ নদী।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের কোটি কোটি মানুষের প্রাণের দাবী ব্রহ্মপুত্রকে প্রাণবান করা। মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিগত সরকার ব্রহ্মপুত্র খননের বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়। মানুষের মনে প্রবল আশাবাদ তৈরি হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে অতিরিক্ত সময় অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্পের কোন সুফল আসেনি। নদীর আকৃতি বা গভীরতা বাড়েনি। জলপ্রবাহ বাড়েনি। বরং দুই-তিন কিলোমিটার প্রশস্ত নদীকে ১০০ মিটার বা তারচেয়েও সরু করে দুইদিকে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎসারিত অনেক শাখানদী এবং খালের মুখ বন্ধ হয়েছে। যেখানে ব্রহ্মপুত্রের একাধিক ধারা ছিল, সেখানে একটি ধারা রেখে অন্যান্য ধারাগুলো বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। ফলে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রকে কার্যত একটি খালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, খননের বালু নদীর মূল প্রবাহের মধ্যেই জমা করার কারণে সেসব জায়গা ভূমিদস্যুদের দখলে যাচ্ছে বা যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তাছাড়া, খননের বালু লোপাট করে একশ্রেণির মানুষ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ কাজে সহায়তা করেছে প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। সবমিলিয়ে একথা নিঃসংশয়ে বলা যায় যে, প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্প ব্রহ্মপুত্রের স্থায়ী সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কাজেই, আমাদের দাবী হলো, অবিলম্বে সর্বনাশা খনন প্রকল্প বাতিল করে ব্রহ্মপুত্রে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের যারা এই প্রকল্পকে ঘিরে দুর্নীতি লুটপাট করেছে এবং বালু সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের বিচার করা হোক।

বক্তারা আরো বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর ঈশ্বরগঞ্জ উচাখিলা মরিচারচর নামাপাড়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে শতশত ট্রলার। সেখানে কোন স্বীকৃত বালু মহাল নাই। এই অবৈধ এবং বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে প্রচণ্ড ভাঙনে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে। ফসলি জমি, বসতভিটা হারাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। প্রায় ছয় থেকে আট কিলোমিটার এলাকায় পরিবেশগত হুমকি তৈরি হয়েছে। আমরা বারবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। জানা যায়, শতশত কোটি টাকার এই অবৈধ বালু বাণিজ্যের ভাগবাটোয়ারা যায় গডফাদার ও প্রশাসনের উচ্চ মহল পর্যন্ত। এখনতো সেই ফ্যাসিস্ট সরকার নাই। তাহলে, এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না কেন? আমরা দাবি করছি, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ উচাখিলা মরিচারচর নামাপাড়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক। অন্যথায় আমরা সমাজের সর্বস্তরের কৃষক-মজুর ও ছাত্রজনতাকে নিয়ে ঘেরাও অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।

সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবি করা হয়, আইনে নিষেধ থাকা সত্বেও বিভিন্ন নদী খাল ও জলাশয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অতীতে ময়মনসিংহ শহরের কাচারিঘাটে ব্রহ্মপুত্রের বুকে বিসর্জনের পাকা ঘাট ও ব্রহ্মপুত্রের মাঝবরাবর সড়ক তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কয়েকমাস আগে নদীর জায়গায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমাদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে সেই কাজগুলো বন্ধ হয়েছিল। এখন নতুন করে ব্রহ্মপুত্রের বুকে একাধিক গণশৌচাগার নির্মাণ কাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। আমরা এই বেআইনি, প্রকৃতি বিরোধী ঘৃণ্য কাজের নিন্দা জানাই এবং বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি, নদীর বুকে গণশৌচাগার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে নির্মাণসামগ্রী এবং কাঠামো অপসারণ করা হোক। পাশাপাশি, যারা এই জঘন্য প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচার করা হোক। আমরা উন্নয়ন চাই কিন্তু উন্নয়নের নামে প্রকৃতি হত্যাকে সমর্থন করি না। আমরা বলতে চাই, বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে ব্রহ্মপুর তথা দেশের প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। প্রকৃতির সুরক্ষা ছাড়া বাঁচার কোন বিকল্প উপায় নাই।

Share