অভিনয়শিল্পী সংঘ কি সংস্কার করতে পারবে ?
বাংলাদেশ অভিনয়শিল্পী সংঘ মূলত ছোটপর্দায় অভিনয় শিল্পীদের সংগঠন। দৃশ্য মাধ্যমের এই সংগঠন শুরু থেকেই বিতর্কীত ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য। বিগত প্রায় দেড়যুগ আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে এই সংঘ। এই সংগঠনের পদধারীরা আওয়ামী লীগ সরকারের সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফুলে ফেপে উঠেছে, চলচ্চিত্রের কেউ না হয়েও অনেকে সরকারী চলচ্চিত্র অনুদানও হস্তগত করেছে। টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের যে কোন প্রোগ্রাম করে হাতিয়ে নিয়েছে সরকারী অর্থ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান সংঘের প্যাডে প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরোধীতা করে সরকারের পক্ষে জনমত তৈরী করেছে। গণহত্যায় সরাসরি মদদ দিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘের এই প্রতিবাদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগনের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে অনেকেই নিজের পরিচয় পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছে। থেমে নেই অভিনয় শিল্পী সংঘ। এক শ্রেণির শিল্পী যারা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা চেষ্টা করছেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সংস্কার করতে আর একপক্ষ কৌশলে চেষ্টা করতেছে আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়া এবং গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকা শিল্পীদের পুর্নবাসন করার।
১৯ সেপ্টেম্বর অভিনয়শিল্পী কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন একটি অন্তর্বতী কমিটি গঠন করেছেন, সেই কমিটি আগামি ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা প্রদান করবেন। এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো। সমালোচনা শুরু হয়, যখন সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম এবং সাধারন সম্পাদক রওনক হাসান কে নির্বাহী কার্যক্রমের ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়। যদি কমিটি ভেঙ্গেই দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে ঐ দুইজন কেনো নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
অভিনয় শিল্পী সংঘের অফিসিয়াল প্যাডের একটি প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দেখা যায় গত ১৫ জুলাই, আন্দোলন চলাকালীন, সংঘের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদ সরাসরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি, সাধারন সম্পাদক।
যে দুইজন ব্যক্তি, সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করলো, শিল্পীদের মর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দিলো, তাদের নির্বাহী ক্ষমতার দায়িত্ব বজায় রাখা কিসের আলামত সেটি নিয়ে চিন্তিত সাধারণ শিল্পীরা। অনেকেই বলছেন, অত্যান্ত কৌশলে যারা গণহত্যার সাথে সম্পৃক্ত তাদের পুর্নবাসন করতে চায় অভিনয় শিল্পী সংঘের কিছু সিনিয়র শিল্পীরা, যারা আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে এখন সুশিল সাজতেছেন। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারকে সুবিধা দেওয়া ছাড়া শিল্পীদের স্বার্থে তেমন কিছু করেনি মতামত দিয়েছে একাধিক শিল্পীরা।
অভিনয় শিল্পর সাথে জড়িত অনেকেই দাবি করেছেন, বাংলাদেশ অভিনয় শিল্পী সংঘ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বি-লীগ হিসেবে কাজ করতো, যার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সরকার অভিনয় শিল্পী সংঘের অফিস করার জন্য জমি দিয়েছে, অথচ দৃশ্যমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সংগঠন চলচ্চিত্র শিল্প, চলচ্চিত্র শিল্পের কোন সংগঠনকে আওয়ামী সরকার কোন জমি দেয়নি।
দর্শকমহলের দাবি, জুলাই ৩৬ এর সফলতার পরে নতুন বাংলাদেশে কোন রাজাকার সংগঠন থাকা নৈতিক ভাবে সমর্থন যোগ্য নয়। বাংলাদেশে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংগঠন করার অধিকার আছে, যে কেউ করতে পারে, কিন্তু যে সংগঠন রাজাকারের ভূমিকায় কাজ করেছে সেই সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের নৈতিক দায়িত্ব হবে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করে, নতুন সংগঠন তৈরী করা। সাময়িক সংস্কার করে এই সংগঠন যদি সামনে এগিয়ে যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই সংগঠন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে নতুন প্রজন্মের সামনে, বিশেষত জুলাই ২৪ এর ভূমিকার জন্য।
১৫ জুলাই অভিনয় শিল্পী সংঘ যে প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলো তা স্পষ্টত গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে, এই প্রতিবাদ বিবৃতির কারনে
অনেক পুলিশ অভিনয়শিল্পীদের সমর্থন পেয়ে মনে করে নির্বাচারে গুলি চালিয়েছে আন্দোলনকারীদের উপরে, যার কারণে নিহত হয়েছে অনেকেই, এই দায় কি বাংলাদেশ অভিনয়শিল্পী সংঘ এড়াতে পারে ?