প্রবাসী সরকারের সব নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল

ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন-২০২২ সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে অধ্যাদেশ হিসেবে জারি করা হয়।

অধ্যাদেশে শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারসহ আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশে আইন সংশোধন প্রস্তাবনায় বলা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২ (২০২২ সনের ১৫নং আইন), এর প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ‘জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করিবার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গঠন করিবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখা, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবারের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।

মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে আইনে বলা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ যাহারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যে সব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এই দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্, তৎকালীন মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন— এইরূপ সব বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসি বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যথা-

১। হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা)।

২। মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারী।

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিচ কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এইরূপ সব বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ই. পি. আর. নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নিম্নবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকরা, সে সময়ে যাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হবেন।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী অংশ যুক্ত করে বলা হয়, ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ অর্থ যারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে নিম্নবর্ণিত যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিলেন, যথা-

১। যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন।

২। যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসি বাংলাদেশ সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং উক্ত সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

৩। মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসি বাংলাদেশ সরকারের সহিত সম্পৃক্ত সকল এম.এন.এ (Member of National Assembly) বা এম.পি.এ (Member of Provincial Assembly) যারা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য (Member of Constituent Assembly) হিসাবে গণ্য হয়েছিলেন।

৪। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক।

৫। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

Share