মাজারে হামলাকে নিজেদের উপর হামলা বলেছেন বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিকরা

ছামিউল আলম রাসু : মাজার-দরবার শরীফসহ সুফীদের ধর্মীয় চর্চার উপরে হামলাকে নিজেদের উপর হামলা বলে ঘোষণা করেছেন বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিকরা।

বিগত ১২ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (স) উপলক্ষ্যে দেশের সকল মানুষের আধ্যাত্মিক চর্চা ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্ল্যাটফর্ম ফানাফিল্লাহ এর পক্ষ থেকে প্রতিরোধ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মাহফিলকে বাংলাদেশের সুফী আধ্যাত্মিকদের সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ এই সমাবেশকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হযরত মুহাম্মদ (স) আগমন দিবস তথা পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর উপলক্ষে মিলাদ পড়ার মাধ্যমে।মিলাদ পাঠ করান সুফী দার্শনিক ড. মাওলানা আনিসুর রহমান জাফরি, ইমান-আল-ওয়ারসি, মহাসচীব, সুফীবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশন।

মিলাদ ও দূরুদ পাঠ শেষে শুরু হয় মাহফিলের কার্যক্রম। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন, সুফীবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশন ড. মাওলানা আনিসুর রহমান জাফরি; জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, সুরেশ্বর দরবার শরীফের খলিফা সুফী দার্শনিক নাসিরুদ্দিন চিশতি , গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দলিত সম্প্রদায়ের নেতা হেমন্ত দাস, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মাশকুর রাতুল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক অংশুমান রায়, কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক মিনহাজুর রহমান আকাশ, কবি ও লেখক মাহাথির মুহাম্মদ।

বক্তব্যে মাওলানা আনিসুর রহমান বলেন , “ইসলামে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। আপনারা পারলে সব সুফীপন্থী বুঝিয়ে নিয়ে যান আপনাদের মতে; কেউ তো মানা করে নাই। কিন্তু হামলার দুঃসাহস করবেন না। আর রাষ্ট্র নামাজ পড়েনা , রোজা রাখেনা যে রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকবে!”

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা বলেন, ” মাজারগুলোর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। তাই এই হামলার ব্যার্থতাও সরকারকেই স্বীকার করতে হবে। হামলাকারীদের ফ্যাসিবাদী এবং জনগনের শত্রু। হামলাকারীরা শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী এবং ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দালাল।”

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম বলেন,”এই হামলায় যারা অংশগ্রহন করেছে তারা বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা করছে।সুফীরা ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় কোনভাবে যুক্ত না। তাদের উপরে হামলার নিন্দা জানাই। আমি হামলাকারীদের বিচার চাই, হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ চাই।”

বক্তারা বলেন, ” সুফীদের উপরে হামলাকারীরা ইসলাম বিকৃতিকারী। যেই সুফীরা দেশে ইসলাম নিয়ে এসেছে তাদের পবিত্র মাজার শরীফে হামলার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। সুফীরা সকলের প্রতি প্রেমের কথা বলেন। ইসলামের প্রকৃত শান্তির বানী সুফিরাই ধারণ করেন। তাদের উপরে হামলায় আমরা বিক্ষুব্ধ। সৈকত আরিফ এই ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিন্দা জানান এবং সুফীদের উপরে এই ধরনের হামলা রুখে দেয়ার ডাক দেন। মাশকুর রাতুল এই ঘটনায় ভারতকে দায়ী করেন এবং হামলাকারীদের জুলাই গণঅভ্যূত্থানের শত্রু বলে ঘোষণা করেন।

অংশুমান রায় বলেন ,সুফীরা এইদেশে প্রেম দিয়ে ইসলামের বিস্তার ঘটিয়েছেন। সুফী মজনু শাহ ছিলেন বৃটিশের বিরুদ্ধে ফকির বিদ্রোহের নেতা। মাজারগুলো যারা ভেঙে ফেলছে তারা এদেশের ইসলাম প্রচারের ইতিহাস মুছে দিতে চায়, সেই সাথে কৃষক বিদ্রোহের স্মৃতিও মুছে দিতে চায়। মাজারগুলোতে যারা হামলা করছে তারা ফ্যাসিস্ট। তারা হাসিনার থেকে কোন বিচারেই ভিন্ন নয়। তাই তাদেরকে হাসিনাকে যেভাবে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হয়েছিলো সেভাবেই মোকাবিলা করা হবে”।

বক্তারা বলেন, “সুফীদের উপরে, তাঁদের ধর্মচর্চার উপরে হামলাকে আমরা নিজেদের উপরে হামলা হিসেবে বিবেচনা করি। কেননা আমরা দেশের সকল মানুষের আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মচর্চার স্বাধীনতার পক্ষে আছি” দলিত সম্প্রদায়ের নেতা হেমন্ত দাস তাঁর সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সুফীদের উপরে হামলার নিন্দা জানান এবং সুফীদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। উক্ত মিলাদ মাহফিলে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন , বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবির নগর ঢাকা কমিটির সদস্য মনজুর মইন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মুরিদান জিসান আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, আবুলুয়াই দরবার শরীফের প্রতিনিধি সুফী সাধক রায়হান মোস্তফা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাগীব নাইম, কবি আরাফাত তারা, শিল্পতত্ত্ববিদ নজির আমিন চৌধুরী জয়, সিনেমাটোগ্রাফার শাসুজ্জোহা স্থির, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক তাসিবুল গণি নিলয়, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়।

Share