বগুড়ায় যুবলীগ নেতার ১৩ বছরের সাজা

ডেস্ক : অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সেই সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে পৃথক দুটি ধারায় যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকারকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জরিমানা প্রদানে ব্যর্থ হলে আব্দুল মতিন সরকারকে আরও ৬ মাস কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রায় প্রদানকালে বিচারক জানান, আসামি আব্দুল মতিন সরকারের পিসিআর (প্রিভিয়াস কেস রেকর্ড) খারাপ। অন্য একটি মামলায় তার ২০ বছরের সাজা হয়েছে। জনগণের কাছে তিনি মূর্তিমান আতঙ্ক। এসব কারণে রাষ্ট্রপক্ষের চাওয়া অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার এক সময়ের যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকার এবং তার ছোট ভাই শ্রমিক লীগ নেতা তুফান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় জেলাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিই ছিল তাদের মূল পেশা। কেউ বাধা দিলে তাকে হত্যা করতেও দ্বিধা করতেন না। দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। এর আগে একটি অস্ত্র মামলায় আব্দুল মতিন সরকারের ২০ বছরের সাজা হয়। সেই সাজার বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেন।

এদিকে ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই এক কিশোরীকে ধর্ষণ এবং তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে তুফানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ‘তুফানকাণ্ডে’র পর আব্দুল মতিন সরকারও গাঢাকা দেন। ওই ঘটনার পর শ্রমিক লীগের বগুড়া শহর কমিটির আহ্বায়কের পদ থেকে তুফানকে এবং শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আব্দুল মতিন সরকারকে বহিষ্কার করা হয়।

অনুসন্ধানে দুদক নিশ্চিত হয় যে, আব্দুল মাতন সরকার ১ কোটি ৪২ লাখ ১৯হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। আর অবৈধভাবে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

এরপর দুদক বগুড়া কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর আব্দুল মতিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ১৪ মাস তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর আদালতে চার্জগঠন করা হয়। তবে চার্জগঠনের আগেই আদালত ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন।

তিনি জানান, সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করায় আদালত দুদক আইনের ২৬ (২) ধারায় আব্দুল মতিন সরকারকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় ২৭(২) ধারায় ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ টাকা জরিমানা করেন।

রায়ে বলা হয়, পৃথক দুটি ধারায় সাজা পৃথকভাবে চলবে। অর্থাৎ আব্দুল মতিন সরকারকে ১৩ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

Share