জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছাত্রদল
মনজুরুল ইসলাম মেঘ :
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি জাতীয় ছাত্র রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো। ২০২৪ এর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে রাজপথের অগ্রগামী সৈন্য ছিলো ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এক এগারোর সময় ছাত্রদল জাতীয় রাজনীতির অসনিসংকেত ভেদ করে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে অবর্তীন হয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করলেও দেশী বিদেশী চক্রান্তের কারণে বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হয়। বিএনপির সিনিয়র ভাইচ চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নামে মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে রাজনীতিতে মাইনাস ফর্মুলার ঘৃন্য চেষ্টা করে এক এগারোর সরকার। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখে ম্ঈন-ফখরুদ্দিন সরকার।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইচ চেয়ারপার্সন (তৎকালীন) তারেক রহমানকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে আন্দোলন তীব্র হয়, এক এগারোর সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও দেশি বিদেশী চক্রান্তের কারনে তৎকালীন সেনা সরকার ক্ষমতায় নিয়ে আসে আওয়ামী লীগকে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা, ফ্যাসিবাদী, একনায়কতন্ত্র শুরু করে। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে আওয়ামী লীগ অন্যায় ভাবে বিএনপি ও সমভাবাপন্ন গণতান্ত্রিক বিভিন্ন দলকে পুলিশ, র্যাব দিয়ে কোনঠাসা করতে থাকে, গায়েবি মামলা, গুম, হত্যা, জবর দখল করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বাদ যায়নি গণমাধ্যমও। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে লন্ডনে প্রেরণ করে বাধ্যতামূলক। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো কে মালয়েশিয়াতে প্রেরণ করে বলপ্রয়োগ করে।
এক এগারোর সেনাশাসকের নির্যাতনের কারণে আরাফাত রহমান কোক মালয়েশিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। একদিকে বড় ছেলেকে কাছে না পাওয়া, ছোট ছেলের মৃত্যু, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম খুনের শিকার। গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী আন্দোলনের ডাক দিলেন, দেশের মানুষ দেশনেত্রীর আহ্বানে ২০১৩-২০১৪ সালে রাজপথে নেমে আসে, আন্দোলনে অংশগ্রহন করে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ র্যাব দিয়ে রাজপথে লাশের পাহাড় তৈরী করে। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ছাত্রদল রাজপথে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করে।
গণতন্ত্রের আপোষহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন বর্জনের ঢাক দিলে বিএনপির নেতা-কর্মী ও ছাত্রদল রাজপথে নেমে আসে, দেশবাসী সেই আন্দোলনে শরীক হয়, আন্দোলন মাস পেরিয়ে শতদিন অধিক্রম করে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতার লোভে একক ভাবে পাতানো নির্বাচন করে, সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে বিনা ভোটে ১৫১ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে অত্যান্ত কলংকজনক ঘটনা। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পায় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শাসিত দেশ হিসেবে। দেশী বিদেশী বিভিন্ন মানবধিকার সংস্থা, আওয়ামী লীগের গুম খুন নিয়ে প্রতিবাদ জানায়, কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার মানবধিকার লঙ্ঘন করে হাজার হাজার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে উজ্জল ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেয়। বিএনপি ও ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গুম খুন হত্যা করে একনায়তন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও হেলমেট বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে দেয়। দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য ছাত্রদল রাজপথে মিছিল করে, আন্দোলন করে। ২০১৮ এর কোটা আন্দোলনে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেয়, পুলিশের মিথ্যা মামলার কারনে হাজার হাজার নেতাকর্মী অত্যাচার সহস্য করে কিন্তু কোটা আন্দোলন সফল করেই বিজয় অর্জন করে রাজপথের সাহসী সৈনিক ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে ছিলো ছাত্রদল, ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের গায়েবী মামলা হামলার কারণে যথাসময়ে শিক্ষা সমাপনী করতে না পারায় কারো কারো বয়স তুলনামূলক একটু বেশি বলে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রদল যদি মাঠে না নামতেন তাহলে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনও সফল হতোনা। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদলের ভূমিকা অর্জন সব সময় রাজপথে। রাজপথে যখন ছাত্রদল থেকেছে, তখন গণতন্ত্রের বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরেছে। সেটি লক্ষ করা গেলো ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবেও।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন কোটা বৈষম্য নিয়ে শুরু হলেও, ছাত্রদলের টার্গেট ছিলো, আন্দোলনকে বেগবান করার। এই আন্দোলন বেগবান করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান সরাসরি ছাত্রদের সাথে অত্যান্ত দক্ষতার সাথে একজন আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বনেতা হিসেবে পর্যবেক্ষণ করে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান যেমন পরাধীন দেশের হাল ধরে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে মুক্তির আলো জ্বালিয়ে ছিলেন, দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিতে ভূমিকা রেখেছিলেন একই ভাবে ২৪ এর ফ্যাসিবাদ পতনের জুলাই আন্দোলনের ত্রাতা হয়ে ছাত্রদলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের দিক নির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে গতিশীল করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। জিয়াউর রহমান ৭১ এ না থাকলে স্বাধীনতা ঘোষিত হতোনা, বাংলাদেশ স্বাধীন হতোনা, ২৪ এর আন্দোলনে তারেক রহমান আন্দোলনের স্পীড না দিলে এই আন্দোলন বেগবান হতোনা। পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আনার জন্য কাজ করছেন তারেক রহমান।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। ফ্যাসিবাদ ও ভোট চোরের জনক মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে যে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন, তা রুখে দিয়েছিলো সেনাবাহিনীর গর্বীতি বীর অফিসার ও সৈনিকরা। সেনাবাহিনীর অনুরোধে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের দায়িত্ব এমন এক সময় গ্রহণ করেছিলেন যখন দেশে খাদ্য ছিলোনা, অর্থ ছিলোনা, বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র ছিলোনা, অনাহারে ঢাকার রাস্থায় প্রতিদিন লাশ পড়ে থাকতো, জিয়াউর রহমান সেই ভঙ্গর দেশের হালধরে দেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন উন্নয়নের জোয়ারে। জিয়াউর রহমান দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশের নাগরিকদের অধিকার ও দেশের মালিকানা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লুটপাত, দুর্নীতি, অর্থ পাচারের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের যে অবস্থা, তাতে খুব শিঘ্রই বাংলাদেশকে বির্নিমাণ করতে না পারলে এই দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। দেশের এই অস্তিরতা, অসম বৈষম্য দূরীকরণ করে, অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে দেশবাসী বাংলাদেশের দায়িত্ব ভার তুলে দেবার জন্য অধির আগ্রহে আছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায়। তিনি দেশে আসবেন রাজকীয় বেশে, পৃথিবীর বর্নিল মহারাজদের বেশে, জুলাই বিপ্লবের মহানায়ক, বিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে। তার আগমনের পথ চেয়ে আনন্দ উল্লাস করবে দেশবাসী, সাধারণ জনতা, শিক্ষার্থী, মেহনতি মানুষ আনন্দে স্বাগত জানাবে তারেক রহমানকে। সেই দিন রাজপথে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুশৃংখল ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সেই দিন হবে গণতন্ত্রের মহাবিজয় ও বাংলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের সূতিকাগার। জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা এবং জুলাই বিপ্লবের বীর সৈনিকরা গণতন্ত্রের মহানায়ক তারেক রহমানের অপেক্ষায় আছেন।
২০২৪ সালের ৫ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ছাত্রদল সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছাত্রদের পাশে দাড়িয়ে ছিলো, মূলত আন্দোলনের বারুদ ছাত্রদল ই প্রথম জালিয়েছিলো তারেক রহমানের নির্দেশে। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার আন্দোলন ব্যার্থ করতে বিএনপি ও ছাত্রদলের নামে সাড়াষী কমান্ড অভিযান পরিচালনা করে, আর সেই কারণে ছাত্রদল আন্দোলনের পিছনে থেকে সামনে ছাত্রদলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের এগিয়ে দেন। বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেও সামনে রাখেন। আন্দোলন যখন প্রকট আকার ধারণ করে, শহীদ হয় আবু সাইদ, মুগ্ধ ও ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম। আন্দোলন মোড়ঘুরে সরকার পতনের দারপ্রান্তে পৌঁছায়। ছাত্রদল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট আন্দোলনে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে। সরকার পতন নিশ্চিত জানতে পেরে বিএনপির নেতাকর্মীদরে গণহারে গ্রেফতার করতে থাকে।
২৮ জুলাই ডিবি হারুন আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায়, ঐ রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান নির্দেশনা প্রদান করে বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে তৃনমূল এবং ছাত্রদল কে। মূলত তারেক রহমানরে ঐ নির্দেশনাতেই ছাত্রদল রাজপথে মৃত্যুর শপথ নিয়ে অবস্থান করে। আন্দোলন বেগবান হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। তারেক রহমান বেছে নিয়েছিলেন কিছু সামাজিক নেতৃবৃন্দকে, যারা সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত, মূলত দেশের এই সামাজিক নেতৃবৃন্দই জুলাই বিপ্লবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিলো যে কোন মূল্যে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন করতে হবে। এই আন্দোলনে তারেক রহমান বেছে নিয়ে ছিলেন, প্রচিলিত নেতানেত্রীর বাহিরে ২০১৩ ও ২০১৮ পরীক্ষিত কিছু নেতাদের, যাদের কোন পদপদবী সেভাবে না থাকলেও সেই নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের অনুগত। তারেক রহমানের এই অনুগত সৈনিকদের দেশবাসি সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব বলে জানতেন, পুলিশও তাঁদের খুজে পেতোনা তেমন। তারা ছাত্রদলকের বিভিন্ন ইউনিটকে কয়েকটি ভাবে বিভক্ত করে সম্মুখ প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে এবং সেই প্রচেষ্টা সফল হয়ে ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে। বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর গণতন্ত্র উদ্ধারের যে আন্দোলন করে যাচ্ছিলো, সেই আন্দোলন ই বৈষম্যহীন কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছিয়েছে।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনকে বেগবান করতে একটি রাজনৈতিক ও গেরিলা ছক তৈরী করা হয়, পরিকল্পনা করা হয় আন্দোলনের দাবানল তৈরী হবে দেশের দুটি রুট দিয়ে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্লান এ হিসেবে খুলনা, সিরাজগঞ্জ, আশুলিয়া, বাইপাইল ও সাভার দিয়ে ঢাকার প্রবেশমুখ এবং সর্বশেষ গনভবন আক্রমন করে হাসিনাকে উৎখাত করা হবে। এই আক্রমনের আগে প্লান বি হিসেবে সরকারকে ভুলপথে পরিচালিত করতে আন্দোলনের শুরুর দিকে যাত্রাবাড়িতে একটি বড়ধরনের আক্রমন করে ব্যস্থরাখা হবে গয়েন্দাবাহিনীকে। তারেক রহমানের বিশ্বস্ত ছাত্রদলের সেই টিম প্রায় ১ বছর যাবত এই পয়েন্টগুলিতে অবস্থান নিয়ে অত্যান্ত গোপনীয় ভাবে গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের জন্য নানা ভাবে কাজ করেছে। এই কাজ পরিচালনা করতে যেয়ে কেউ কেউ ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলো প্রায় ১ বছর যাবত।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলন যখন বিজয়ের দারপ্রান্তে ঠিক তখন হঠাৎ ২৮ জুলাই ডিবি হারুন ৬ সমন্বয়ক কে দিয়ে আন্দোলন তুলে নেওয়ার নাটক সাজালে দেশবাসী দ্বিধায় পড়ে যায়, তখন তারেক রহমান ছাত্রদলের বিশেষ সেই বাহিনীকে প্লান এ বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দিলে, মৃত্যুর শপথ নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে নেমে পড়ে ছাত্রদলের বিশেষ গোপন ইউনিট। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের জেলে ভরে আওয়ামী লীগ ভেবেছিলো আন্দোলন থামিয়ে দিবে, কিন্তু বিএনপি ও ছাত্রদলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী আছে যারা এক একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক, হয়তো দলীয় পদে নেই। দীর্ঘ ১৭ বছর ছাত্রদলের যে সকল নেতা-কর্মী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিপিড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের সংখ্যা প্রায় কোটির উপরে।
ঢাকার রাজপথে জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপশি সাধারণ জনগন নেমে এসেছিলো। এই সাধারণ জনগন আসমান থেকে নেমে আসেনি, এই সাধারণ জনগন বাংলাদেশের জনগন, এই জনগন ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্যাতনের শিকার, এই জনগন গত ১৭ বছর বিএনপির নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন, এই সাধারণ জনগন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করেছেন, এই জনগন তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন সেই পথ চেয়ে আছেন, এই সাধারণ জনগন আবু সাইদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমের জন্য চোখের অশ্রু ফেলেছেন, এই জনগন জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের জন্য কান্না করেছেন, এই সাধারণ জনগন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট বিরোধী যুদ্ধে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। এই জনগন ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে ছাত্রদল রাজপথে পিছনে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মুখে রেখছিলো। জুলাই আন্দোলনে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন, কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছিলেন ছাত্রদলের কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থী। জুলাই বিপ্লবের শিক্ষারার্থীদের একটাই চাওয়া ছিলো ছাত্রলীগের পতন ও ধ্বংস। বিএনপি ও দেশবাসী চেয়েছিলো আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার। বিএনপি, ছাত্রদল, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর সম্মিলিত আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারে পতন হলেও একটি পক্ষ ছাত্রদলকে আড়াল করে বিজয় কেড়ে নিতে অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রদলের বিজয় মিশে আছে শহীদদের রক্তের ঋণে, আহতের শরীরের ব্যাথায়, বোনের কান্নায়, মায়ের আহাজারিতে। আইন করে তুমি বাগান করা বন্ধ করতে পারো, কিন্তু বসন্ত ও ফুলফোটা বন্ধ করতে পারবেনা। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদলের অবদান হয়তো কাগজে লেখা থাকবেনা, কিন্তু সারাবিশ্বে মুক্তিকামি জনগনের স্বাধীনতায় অনুপ্রেরণা জোগাবে ছাত্রদল। বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়, আধুনিক, সুশৃংখল ছাত্র রাজনীতির বৃহৎ সংগঠন ছাত্রদলের অবদান।
লেখক:
মনজুরুল ইসলাম মেঘ
সম্পাদক
দ্য পার্লামেন্ট ফেইস,
প্রধান সম্পাদক
ওয়ার্ল্ড নিউজ অফ বাংলাদেশ।