৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই বিপ্লবের চেতনায় ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪ এর জুরী স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে গতকাল ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার, বাংলাদেশ সময় রাত ১১:৩০ টায়। বেলজিয়ামের গবেষক, নারী চলচ্চিত্র পরিচালক আনি ক্লার্ক উৎসবের উদ্বোধন করেন।

সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা ও উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানী নারী চলচ্চিত্র পরিচালক, অধ্যাপক কাইনাথ থিবিউ, নেপালের চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক প্রদীপ পোখরেল, পুর্তগালের নারী চলচ্চিত্র পরিচালক মেরিইনা লিওনার্দো ও বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র পরিচালকবৃন্দ।

৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ¯ স্লোগান করা হয়েছে  রক্তের ঋণে স্বাধীনতা/জাগ্রত হোক মানবতা”। উৎসব উৎসর্গ করা হচ্ছে জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। উৎসবের পোষ্টারে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই ৩৬ বিপ্লবের রক্তাক্ত জমিন। পোষ্টারে স্থান দেওয়া হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদের স্কেচ, যেটি আন্দোলন চলাকালীন ভারতীয় চিত্রকর কৌশিক সরকার স্কেচ করেছিলেন।

উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষন হিসেবে থাকছে ২৬ দেশের ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নির্মিত চলচ্চিত্র ও অংশগ্রহণে “ইন্সটিটিউট ফোকাস” সেকশন। এছাড়াও উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে ৬৮ দেশের দুইশত পয়ত্রিশটি চলচ্চিত্র।

উদ্বোধনী বক্তিতায় বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র পরিচালক আনি ক্লার্ক বলেন সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অনলাইনে জুরী স্ক্রিনিং শরু হলো আজ, উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে থাকছে, বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্ভাবিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্মিত “এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস, জিরো নেট কার্বন ইমিশন, জিরো প্রভারটি, জিরো আনএমপ্লাইমেন্ট” ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র। এটি যৌথ ভাবে পরিচালনা করেছেন আনি ক্লার্ক, মিশেল ভ্যান ডের ভেকেন।  

আনি ক্লার্ক বলেন, আমরা সম্মানিতবোধ করছি, এমন একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে। আগামি ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ আমরা এই উৎসবের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সাথে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিবো। আমরা এমন একটি সময়ে বাংলাদেশে আসতেছি, যখন বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি আমাদের জন্য অত্যান্ত আনন্দের এবং সৌভাগ্যের। আশা করছি বাংলাদেশ থেকে আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা হবে।

পাকিস্তানী নারী চলচ্চিত্র পরিচালক, অধ্যাপক কাইনাথ থিবিউ বলেছেন, আমার জন্ম সিন্দু অববাহিকায়। কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যার প্রাচীন নগরীতে আমি বড় হয়েছি, আমি অনেক আগে থেকেই বগুড়ার মহাস্থানগড়, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, সত্যজিৎ রায়, হিরালাল সেন সম্পর্কে জেনেছি। বাংলাদেশে যাওয়ার স্বপ্ন আমার বহু বছরের, সেটি এমন এক সময় সত্যি হতে যাচ্ছে, যখন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইউনূস বাংলাদেশ সরকারের প্রদান। আমি মনে করি, আমাদের আদি সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্র বিনিময়ে এই উৎসব বাংলাদেশ-পাকিস্তানের একটি সেতু বন্ধন হতে পারে।

নেপালের চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাংবাদিক প্রদীপ পোখরেল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র পশ্চিমে  প্রমোট করতে মনজুরুল এবং তার প্রতিষ্ঠান সিনেমাকিং যে ভাবে একটি আন্তর্জাতিক ব্যান্ড হয়েছে, তা বাংলাদেশকে অনন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় অনেক চলচ্চিত্র উৎসব হয়, কিন্তু সিনেমাকিং এর মতন নিরপেক্ষ ও গুনগত মান বিচারে ফ্যাস্টিভাল খুব বেশি নেই। বাংলাদেশী চলচ্চিত্র উৎসবের সাথে আমরা সম্পৃক্ত আছি, আমরা বাংলাদেশকে হিমালয়ের মতন উচ্চতায় দেখতে চাই।

পুর্তগালের নারী চলচ্চিত্র পরিচালক মেরিইনা লিওনার্দো জানিয়েছেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সাথে বেশি বেশি পরিচিত হতে চাই, আশা করছি সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব সেই সুযোগ করে দিবে।

সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (সিআইএফএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা ও উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ জানিয়েছেন, অর্ন্তবর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও দেশি-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বহুদেশীয় সম্পর্ক স্থাপন এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি সারা বিশ্বে তুলে ধরতে এই বার উৎসবে তরুণদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এই কারনে আমেরিকার- নিউ ইর্য়ক ফিল্ম একাডেমি, চায়নার- বেইজিং ফিল্ম একাডেমি, রাশিয়ার- মস্কো স্টেট ইন্সটিটিউট অফ কালচার, ভারতের- সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট, কাতারের- নর্দানইস্ট ইউনিভার্সিটি ইন কাতার, ইন্দোনেশিয়ার-ইন্দোনেশিয়ান এডুকেশন ইউনির্ভাসিটিসহ ২৬ টি দেশের ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে “ইন্সটিটিউট ফোকাস” সেকশন। এই একটি সেকশনের মাধ্যমে সারাপৃথিবীতে একটি বার্তা পৌছানোর চেষ্টা করেছে আমাদের উৎসব টিম “রক্তের ঋণে স্বাধীনতা/জাগ্রত হোক মানবতা”। বাংলাদেশের জুলাই ৩৬ বিপ্লবের গণহত্যা তুলে ধরে সারা পৃথিবীতে হানাহানি, যুদ্ধ ও নিসংসতা বন্ধ করে শান্তির আহ্বান করছি আমরা।

আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে “মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় চলচ্চিত্রের ভূমিকা” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার বাংলাদেশ সময় রাত ১১:৩০ টায়, অংশগ্রহণ করবেন বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা। আগামিকাল শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে “ফ্যাসিবাদের কবলে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি”, “জুলাই ৩৬ প্রেক্ষিত কালচারাল পলিটিক্স” শীর্ষক সেমিনার। আগামি শনিবার ২১ ডিসেম্বর অনলাইনে জুরী স্ক্রিনিং শেষ হবে।

উল্লেখ্য, ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪ এ ইউরোপ, আমেরিকার ও এশিয়ার ত্রিশের অধিক চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলী সরাসরি অংশগ্রহণ করবে আগামি ২২ ফেব্রুয়ারি হতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ উৎসবের এ্যাওয়ার্ড প্রদান ও পাবলিক স্ক্রিনিংয়ে। ঐ সময় আরো অনুষ্ঠিত হবে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক কর্মশালা, সেমিনার, মাষ্টারক্লাস। উৎসবের সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে জুলাই ৩৬ গনহত্যার তথ্যচিত্র নির্ভর পূর্নদৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র  “নেক্সট জেনারেশন লিডার”।

Share