চলচ্চিত্র সার্চ কমিটির বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএফডিসি’তে ঝড়

স্টাফ রিপোর্টার : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের “চলচ্চিত্র সার্চ কমিটি’র আহবায়ক আল আমিন রাকিব (তনয়) এর একটি বক্তব্য ভারাইরাল হয়েছে । সেই বক্তব্যে তনয় বলেছেন আওয়ামী লীগের বাহিরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে গুণগত মানসম্পূর্ণ শিল্পী কুশলী নেই। তাই বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটিতে পুর্নবাসন করা হয়েছে।

আল আমিন রাকিব তনয় আরো বলেছেন বিএফডিসি’তে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই বাংলা বানান ভুল করে, তারা ইংরেজি বুঝে না, তাই তাদেরকে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হয়নি।

চলচ্চিত্র সার্চ কমিটির এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বিএফডিসিতে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। আজ ১০ অক্টোবর, বিএফডিসিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে সার্চ কমিটির আহবায়কের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং ১৫ অক্টোবর, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরাম।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের আহবায়ক সামসুল আলম জানিয়েছেন, ভাইরাল হওয়া বক্তব্য আমরা শুনেছি, অত্যান্ত নিন্দনীয় ভাবে আমাদের সমগ্র চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা চলচ্চিত্রের সকল সংগঠন মিলে আগামি ১৫ অক্টোবর মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমাদের সকল সংগঠনের সদস্য, নেতৃবৃন্দ ও শিল্পী কুশলীরা উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানাবেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন জানান, চলচ্চিত্র সার্চ কমিটির আহবায়ক আল আমিন রাকিব তনয় এক বক্তব্যে চলচ্চিত্রের সকল পেশাজীবিদের নিয়ে মানহানিকর অনেক কথা বলেছে, সে দাবি করেছে বিএফডিসিতে যে সকল চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা আছে তারা বাংলা বানান জানেনা, ইংরেজি বুঝেনা, শিক্ষিত নয়। তার এই মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদ জানাই, তাকে অবিলম্বে সার্চ কমিটি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং চলচ্চিত্রের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে চলচ্চিত্র সার্চ কমিটি গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের যুগ্ম সদস্য সচিব, চলচ্চিত্র পরিচালক তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া (সায়মন তারিক) জানান, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সুবিধাবাদী আল আমিন রাকিব তনয় মুজিব বর্ষের বির্তকীত “বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” ডকুমেন্টারি গবেষনা টিমের সদস্য। সেই ডকুমেন্টারিতে শেখ মুজিবের মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ভুল ইতিহাস জাতির সামনে উপস্থাপনকারী এই আল আমিন রাকিব তনয় খুনি হাসিনার দোষর হিসেবে আওয়ামী লীগের দালালদের কমিটিতে বসিয়ে নৈতিক ভাবে চলচ্চিত্র সার্চ  কমিটির পদে থাকার অধিকার হারিয়েছে। তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সায়মন আরো বলেন, চলচ্চিত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হোসনেকে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য করার এবং আহমেদ মুজতবা জামালের মতন ধান্দাবাজ একজন আওয়ামী ফ্যাসিস্টকে চলচ্চিত্র অনুদান কমিটিতে পুনরায় সদস্য করায় প্রতিবাদ জানাই। অনিয়ম, দূর্নীতির কারণে আহমেদ মুজতবা জামাল পরিচালিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে। খুনি হাসিনার সরকার বিচারবর্হিভূত হত্যার কারণে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলো সরকারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব। অন্যায় অনিয়ম দূর্নীতি করার কারণে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত একমাত্র বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের সম্মান সারাপৃথিবীতে ক্ষুন্ন করার অপরাধে আহমেদ মুজতবা জামালকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।

সাময়ন তারিক আরো জানান, মুজিব শতবর্ষ কমিটির সদস্য আহমেদ মুজতবা জামাল বিগত কয়েক বছর যাবত  চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং চলচ্চিত্র উৎসবের নামে মদের পার্টি করে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লন্ডনে ভিষা নিষেধাজ্ঞা আছে। তাকে পুনরায় চলচ্চিত্র অনুদান কমিটিতে রেখে জুলাই আগস্ট ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা হয়েছে, আমরা প্রতিবাদ জানাই, বিচার দাবি করি।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন ফোরামের যুগ্ম সদস্য সচিব, চলচ্চিত্র পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ জানান, আমরা চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ। শিল্পী কুশলীদের অধিকাংশই রাজনীতি করেনা অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক। জুলাই ৩৬ গণবিপ্লবে আমরা শুরু থেকে সম্পৃক্ত ছিলাম, আন্দোলন চলাকালীন বিএফডিসিতে আমাদের নামে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দালরা বিভিন্ন লিস্ট করেছিলো, আজ আমরা যদি সফল না হতাম তাহলে বিগত দিনে আওয়ামী লীগ বিরোধী বক্তব্য প্রদান ও লেখালেখির জন্য আমি মামলা খেয়ে আটক হয়েছিলাম, ঠিক একই ভাবে জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আবার হয়তো নির্যাতনের শিকার হতাম। কিন্তু মহান আল্লাহর মেহেরবানী ও গণআন্দোলনের কারণে আমরা বিজয়ী হয়েছি।

মনজুরুল আরো বলেন, সহস্র শহীদের রক্তের উপরে দাড়িয়ে আছে নতুন বাংলাদেশ, শহীদদের কবরে হয়তো এখনো রক্তের দাগ লাল হয়ে আছে কাফনের কাপড়ে, অথচ এর মধ্যেই একটি শ্রেণি দুর্নীতির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের পুর্নবাসন করতেছে, এটা মেনে নেওয়া যায়না। যারা আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন। আমরা আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট পতন করেছি, অন্তবর্তী সরকারের অংশ আমরা। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে চলচ্চিত্রে অনুদান না দিয়ে সেই অর্থ জুলাই ৩৬ বিপ্লবের আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ব্যয় করা হোক। জুলাই ৩৬ আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারে একজন করে সরকারী চাকুরী দিন এবং আহতদের মধ্যে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারী চাকুরি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করুন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চলচ্চিত্র সার্চ কমিটির সুপারিশে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। সেই কমিটি গুলির তালিকায় দেখা গেছে চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য, চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরী বোর্ড সদস্যদের অধিকাংশ সদস্যরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী। যারা আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শাষনকালে বিভিন্ন অর্থ সুবিধা নিয়ে ফুলেফেপে উঠেছে বলে অভিযোগ আছে।

Share