Thursday, November 7, 2024
সামাজিক

 ভূমিহীন আন্দোলনের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

সামিউল আলম রাসু: গত ৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত “বৈষম্যবিরোধী গণ অভ্যুত্থান – কৃষি, কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা” শীর্ষক আলোচনা সভায় উল্লেখযোগ্য সমাজকর্মী, একাডেমিক এবং নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন, প্রগ্রেসিভ লিবারেশন প্ল্যাটফর্ম (PLP) এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সহযোগিতায় এই গোলটেবিল বৈঠকটি সংগঠিত হয়। ভূমি অধিকার, লিঙ্গ প্রতিনিধিত্ব এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক শোষণের মতো বিষয়গুলোকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করা হয়।

মূল বক্তব্য ও দাবি:

সভাটি পরিচালনা করেন সাকিব প্রত্যয় (PLP) এবং সামিউল আলম রাসু (বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন)। সাকিব প্রত্যয় ভূমিহীন আন্দোলনের নয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এতে ভূমি সংস্কার, খাস জমির পুনর্বন্টন, এবং প্রান্তিক কৃষকদের শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলীম আক্তার খান সূত্রধর হিসেবে আইন ও প্রশাসনের দৃষ্টিতে ভূমিহীন কৃষকের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। অনেক জনবান্ধব আইন প্রণীত থাকলেও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানাবিধ অন্তরায় থাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

বক্তাদের বক্তব্য:

শেখ নাসির উদ্দিন এবং সাঈদুল রহমান লুৎফর, ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, দ্রুত খাস জমি পুনর্বন্টন এবং আবাসন কোম্পানির অবৈধ জমি দখলের জবাবদিহিতার দাবি জানান।

ফরিদা আখতার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, ভূমিহীন জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্বের কথা বলেন। তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার হলে, ভূমিহীন মানুষের কণ্ঠস্বর সেখানে থাকতে হবে।” তিনি নারীদের ভূমিকা এবং পল্লী অর্থনীতিতে গবাদিপশু পালনকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন।

শহিদুল আলম, প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও নাগরিক অধিকার কর্মী, গণজাগরণের সাফল্য ভূমিহীন জনগণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভরশীল বলে উল্লেখ করেন। সংস্কার কমিশন থেকে শুরু করে নানান জনগোষ্ঠির নেতৃত্বে নারীদের অভাবের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, কৃষি খাতে শোষণ নির্মূলের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

জাকির হোসেন, নাগরিক উদ্যোগ-এর প্রধান নির্বাহী, ভূমি সংস্কারের পক্ষে জোরালো আহ্বান জানান এবং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি তোলেন।

ওবায়দুল ইসলাম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, সার ও কীটনাশক সিন্ডিকেটের শোষণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি এই সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্য কৃষি বাজার গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান।

নাহিদ হাসান, গণ বুদ্ধিজীবী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভূমি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।

তানজিম তাহের, একজন ডেটা সায়েন্টিস্ট, কৃষিতে প্রযুক্তির প্রভাব এবং ভূমি ও সম্পদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহজ প্রবেশাধিকারের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১. ভূমি পুনর্বণ্টন: প্রকৃত ভূমিহীন মানুষের মাঝে খাস জমি বণ্টনের দাবি জানানো হয়।
২. কৃষিতে শোষণ: সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সার ও কীটনাশক বাজারের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি ও কৃষি শ্রমের শোষণ নিয়ে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
৩. লিঙ্গ প্রতিনিধিত্ব: নেতৃত্বে নারীদের অনুপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
৪. টেকসই কৃষি: প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়।

সমাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি:

বৈঠকটি দুপুর ১টায় সমাপ্ত হয়। অংশগ্রহণকারীরা ভূমি সংস্কার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা ও আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে শোষণমূলক কৃষি সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্য ভূমি বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফেসবুক সংবাদ

Moralook Limited