চট্টগ্রামে গান গেয়ে পিটিয়ে হত্যা

ডেস্ক: চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গান গেয়ে মো. শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলেছে, ছিনতাইকারী সন্দেহে ওই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ঘটনার সময় সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা একটি গ্রুপ।

‘চট্টগ্রাম ছাত্র–জনতা ট্রাফিক’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সূত্র ধরে সেসব আসামিকে শনাক্তের পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দামপাড়ায় অবস্থিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) ও অপরজন ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট রাতে নগরের আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকায় শাহাদাত হোসেন নামে ওই যুবকে পেটানো হয়। পরদিন ১৪ আগস্ট সেখান থেকে অন্তত এক কিলোমিটার দূরে নগরের প্রবর্তক মোড়ে বদনা শাহ মাজারের সামনে থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার ঠিক এক মাস পর শাহাদাত হোসেন নামে সেই যুবককে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পেটানোর একটি ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হলে ঘটনার নৃশংসতার বিষয়ে সবার জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ তৎপর হয়।

গতকাল মঙ্গলবার ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আজ সংবাদ সম্মেলন করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বর্বরোচিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম ছাত্র–জনতা ট্রাফিক গ্রুপ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শনাক্ত করা হয়। গ্রুপটির অ্যাডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী ওরফে জুয়েল (৪২)। গতকাল বিকেলে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা জুয়েলকে নগরের বিপ্লব উদ্যান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ছাত্র–জনতা ট্রাফিক গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী সালমান নামে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে শনাক্তের পর ওই দিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সময় অভিযুক্ত কিশোর মৃতপ্রায় শাহাদাতের গাল চেপে ধরে ‘এ ভাইয়া সবাই একটা সেলফি তুলে যান’ এমন কথা বলে।

ওই দিন রাতেই নগরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে চট্টগ্রাম ছাত্র–জনতা ট্রাফিক গ্রুপের আরেক সক্রিয় সদস্য ও ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে আনিসুর রহমান ইফাতকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ঘটনার বর্ণনায় কাজী মো. তারেক আজিজ আরও বলেন, গত ১৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১৪ আগস্ট রাত দেড়টায় ২ নম্বর গেট ট্রাফিক চত্বরে ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাত হোসেনকে ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রাতের অন্ধকারে মৃত শাহাদাতকে পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনা শাহ মাজারসংলগ্ন রাস্তার সামনে ফেলে দিয়ে চলে যায় হত্যাকারীরা। ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করা হয়।

তবে শাহাদাতের স্ত্রী শারমিন আক্তারের বড় বোন হোসনে আরা বলেন, ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে শাহাদাতের পরিচিত সাগর নামে এক যুবক ফোন করে ‘কথা আছে’ বলে বাসা থেকে বের হতে বলেন। শাহাদাত টেলিফোনে বলার অনুরোধ করার পরও অপর প্রান্ত থেকে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুরোধ করায় তিনি বের হয়েছিলেন। বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহাদাতের খোঁজ মিলছিল না।

শাহাদাত নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন।

 

Share