নাগরপুর ইউএনও বালু উত্তোলণ সিন্ডিকেটের গডফাদার

বিশেষ প্রতিনিধি :

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান এর বিরুদ্ধে নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন ইউএনও নিজেই বালু উত্তোলণ সিন্ডিকেটের গডফাদার, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১ জুলাই দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় উঠে এসেছিলো অনিয়ম ও বিধি বর্হিভূত কার্যকলাপ করার সংবাদ, কিন্তু আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর আস্তাভাজন হওয়ায় নিয়ম পালন আবশ্যিক মনে করতেন না তিনি, থেকেছেন প্রশাসনের ধরাছোয়ার বাহিরে, অবৈধ ভাবে ভূমি দখল করে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্থ।

 


রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান এর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ২০২০ সালে প্রকাশিত সংবাদের লিংকে বিস্তারিত- পুলিশ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত, রোষানলে ম্যাজিস্ট্রেট

১ সেপ্টেম্বর নাগরপুর উপজেলায় সরেজমিন খোজ নিয়ে দেখা গেছে কেদারপুর ব্রিজের নিচে অবৈধভাবে ডেজার বসিয়ে বালু উত্তলোন করা হচ্ছে, স্থানীয় কিছু লোকজন এটি দেখভাল করলেও বালু বিক্রির টাকা যাচ্ছে ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান এর নিকটে । বালু উত্তোলণের নিয়ম অনুসরণ না করায় নদীর পাড় ভেঙ্গে ফসলের জমির ক্ষতি হচ্ছে, যে কোন সময় ব্রীজের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

ভিডিওতে বালু উত্তোলনের দৃশ্য

ব্রীজের এত নিকট থেকে কেনো বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে এই বিষয়ে নাগরপুরের ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি প্রথমে দাবি করেন তার উপজেলায় কোথাও নদী থেকে বালু উত্তোলণ করা হচ্ছেনা, পরে ভিডিওতে বালু উত্তোলনের প্রমাণ আছে এমন কথা বলা হলে তিনি কথা না বাড়িয়ে সন্ধ্যায় প্রতিবেদককে তার বাংলোতে দেখা করতে বলেন। প্রতিবেদক পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চান, তার বাংলোতে কেনো দেখা করতে যেতে হবে, তখন রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান নিজেকে ফখরুলের আত্নিয় (বিএনপি’র মহাসচিব) পরিচয় দেন এবং হুমকি দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে নিষেধ করেন।

প্রতিবেদক টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে মোবাইলে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কোন সরকারী কর্মকর্তা ফায়দা নিতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি কঠোর হস্তে সেটি বন্ধ করবে। বিএনপির কোন নেতার আত্নিয় পরিচয় দিয়ে কেউ অসৎ কার্যকলাপ করলে সেটির সাথে বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মো: কায়ছারুল ইসলাম এর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর, তিনি জানিয়েছেন অতিদ্রুত নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলি ও বিভাগী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারকে অবগত করবেন।

এই প্রতিবেদকের তদ্বন্তে উঠে এসেছে, নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান সাবেক নারায়ণগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেলে দায়িত্ব পালনের সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে। যার প্রেক্ষিতে সরকারী কর্মকর্তার বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করে নিপিড়ন চালায় সাধারণ জনগনের উপরে। ভূমিদখল করতে নারায়নগঞ্জ ৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ডানহাত হওয়ায়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এর সাথে পরিচয় পরিচয় করিয়ে দেয় শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের আস্থাভাজন হয়ে উঠলে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা করে নিজের কাছে নিয়ে যান।

আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ইটনা উপজেলা প্রশাসন থেকে তথ্য নিয়ে জানিয়েছেন, যতদিন রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান ইটনাতে ছিলেন, একজন ইউএনও হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করার কথা তিনি সেটি না করে একজন আওয়ামী লীগের নেতার ভূমিকা পালন করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর ছেলে সাবেক এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এর কিশোরগঞ্জ-৪ আসন (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আওয়ামী লীগের ভোট চুরির শতভাগ নিশ্চিত থাকায়, টাঙ্গাইল ৬ আসনে ভোট কারচুপির করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে (সেপ্টম্বের ২০২৩) নাগরপুর উপজেলায় সাবেক বানিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু কে নির্বাচিত করার জন্য প্রেরণ করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনে ১০ শতাংশেরও কম ভোট কাস্টিং হলেও, চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী কাস্টিং (প্রদত্ত) দেখানো হয়েছে ১,৬২,০০৫ ভোট। প্রায় পঞ্চাশ হাজার ভূয়া-জালভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আহসানুল ইসলাম টিটুকে নির্বাচিত করতে সহযোগিতা করেন নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান।

আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুকে অবৈধ ভাবে জিতিয়ে দেওয়ায় উপজেলার সকল প্রকল্প থেকে নির্দিষ্ট হারে ঘুষ নিতো ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান। তার অবৈধ চাহিদা পূরণ করতে যেয়ে একাধিক টিকেদার খতিগ্রহস্থ হয়েছেন জানয়েছে এই প্রতিবেদককে। ঘুষের পাশাপাশি টেন্ডার বানিজ্য শুরু করেন ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান ড্রাইভারের নামে এবং স্থানীয় কয়েকজন সুবিধাবাদীদের নাম দিয়ে। রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান নদী থেকে অবৈধ বালু ইত্তোলণ করে ঘুষ নেওয়ার পাশাপাশি বালু উত্তোলণে মালিকানা দাবি করলে আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু কিছুটা বিরক্ত হলেও সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ হওয়ায় মুখবুঝে সহ্য করেছেন জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনেইচ্ছুক এক নেতা।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার সাথে সাথে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বিএনপি সমর্থকদের সাথে মিশতে শুরু করেন এবং নিজেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আত্নীয় বলে প্রচার করেন, তাকে বিএনপি নেতার আত্নিয় পরিচয়ে সর্বত্র প্রচার করেন পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়্যারম্যান। বিএনপির মহাসচিবের আত্নিয় শুনে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পিছু হটে, এই সুযোগে নদী থেকে ডেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের গডফাদার হয়ে উঠেন স্বয়ং নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই। স্থানীয় শামীম, মুক্তা, আরিফ, আয়নাল, সেতাব আলী প্রমুখদের বালু উত্তোলণের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে পর্দার আড়ালে কলকাটি নাড়েন ইউএনও।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিবের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের একজন নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির কোন জাতীয় নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে অথবা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অনিয়ম দূর্নীতি করলে তাকে আটক করে পুলিশ বা আর্মির হাতে তুলে দিতে নেতা কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কয়েজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছেন, আমরা অপেক্ষা করছি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে, আমরা আন্দোলন করে স্বৈরাচার পতন করেছি, আমাদের নাগরপুর উপজেলায় কোন ভূমি দস্যু, নদী সন্ত্রাস, বালুখেকো ইউএনও কে মেনে নেওয়া হবেনা। অতিদ্রুত প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিলে, অনাকাঙিখত কোন ঘটনার জন্য প্রশাসনকে দায় নিতে হবে। একজন সরকারী কর্মকর্তা যার বিরুদ্ধে ২০২০ সালেই আইন বর্হিভূত কার্যকলাপের অভিযোগ আছে, সে বিগত দিনে সরকারী কর্তকর্তার আচরণ না করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মতন আচরণ করেছে, আমরা দেখেছি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় কি পরিমান অন্যায় অনিয়ম তিনি নাগরপুরে করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনীর আচরণ করেছেন, সে কি ভাবে এই উপজেলার দায়িত্বে এখনো আছেন এই প্রশ্ন করেছে আন্দোলনকারীরা। ছাত্ররা আরো জানিয়েছে, দুর্নীতিবাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধানের পক্ষ নিয়ে যারা অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতা করছে তাদেরও প্রতিরোধ করবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তরা।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালনকালীন তার বিরুদ্ধে একাধিকবার ভূমি দখলের অভিযোগ উঠলেও আওয়ামী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থায় গ্রহণ করেনি জানিয়েছেন নারায়গঞ্জের একাধিক ভুক্তভোগী। এখন আবার নাগরপুর উপজেলার নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদীভাঙ্গন এলাকার সাধারণ মানুষ এই ইউএনও’র অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছেনা। গত ১৭ বছর নদী থেকে বালু উত্তোলণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা, জেল জুলুমের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি, এখন ইউএনও নিজেই বালু উত্তোলণ সিন্ডিকেটের গডফাদার। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তাহলে রক্ষা করবে কে এই প্রশ্ন নাগরিক সমাজের।

Share