এফডিসিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত না মেনে বিধিবহির্ভূতভাবে ফ্যাসিবাদের দালাল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে বিএফডিসি’তে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এফডিসিতে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
৭ জুলাই, সোমবার জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এফডিসির সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সক্রীয় অংশগ্রহণে মিছিলটি সমগ্র এফডিসি প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

বিক্ষোভ শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদসভায় জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহজাদা সাইদ বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত না মেনে অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতদের পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেই আমাদের এই বিক্ষোভ। যোগ্যদেরকে পদোন্নতি বঞ্চিত রেখে নিয়মবহির্ভূতভাবে গণহত্যাকারী স্বৈরাচার হাসিনার দোসরদেরকে পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে আমরা বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে পদোন্নতি প্রক্রিয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
জি এম সাঈদ বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৫৭ সালের প্রবিধানমালা দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় ১টি গ্রেডেশন তালিকা হওয়া আইনসম্মত। আর গত ২২ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত ১ম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়ে গ্রেডেশন তালিকা তৈরি করা হয়। ২৩ জুন সেটি নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর পরে আমরা লক্ষ্য করেছি পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত না মেনে ৯৫% কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে গ্রেডেশন তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৩১১তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় পর্ষদের সদস্যরা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, পদোন্নতির আদেশ জারির তারিখ হতে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণ করা হবে, এক্ষেত্রে ফিডার পদে যোগ্য হওয়ার তারিখ হতে জেষ্ঠ্যতা প্রদানের সুযোগ নেই। আর ৩১৪তম পরিচালনা পর্ষদের সভার ক্রমিক নং ৩ এ ভূতাপেক্ষ সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। ভবিষ্যতে পর্ষদ সভায় ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য কোনো বিষয় উপস্থাপন করা যাবে না মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সাঈদ আরো বলেন, সভায় বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত না মেনে বিধিবহির্ভূতভাবে এফডিসি কর্তৃপক্ষ গ্রেডেশনের তালিকা নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়৷ সূত্র নং-এফডিসি/প্র:-১/৪৯৮/৯৬ (অংশ -১) /৪৪৭(১)/৪ক (১), তারিখ : ২৮/৫/২০২৫ মোতাবেক পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে ধারণকৃত জেষ্ঠ্যতা প্রদানের লক্ষ্যে মতামত /সুপারিশ প্রদানের জন্য ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর গঠিত কমিটির চারজনই জেষ্ঠ্যতা নেওয়ার কারণে এই কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়েও এফডিসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনে নানা ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। যার কারণে এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে যে আংশিক গ্রেডেশন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়েছে বলে জানান পদোন্নতি বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তারা। আর বিতর্কিত এই কমিটির সুপারিশ বাতিল করে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণের অনুরোধ জানান কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুমা রহমান তানী চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পেলে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্বরা ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে এমডির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলো। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন বিএনপির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, মেগাস্টার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্বল, জাসাস আহ্ববায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, জাসাস সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, বৈষম্যহীন চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষন কমিটির আহ্বায়ক চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। এমডির পদত্যাগ দাবি জানিয়ে আন্দোলনকারীরা তখন বলেছিলেন, আওয়ামী যুবলীগের অর্থায়নে মাসুমা রহমান তানী “চলযাই” নামের একটি সিনেমা তিনি পরিচালনা করেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান কে নিয়ে নির্মিত ঐ সিনেমাতে মিথ্যা ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে, সে ফ্যাসিবাদের দোসর। জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অন্তবর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এফডিসির মতন একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি মিথ্যা ও ভূয়া তথ্য দিয়ে এমডি হয়েছেন, আমরা তার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানাই। উল্লেখ্য মাসুমা রহমান তানী “চলযাই” নামে একটি মাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেই, এফডিসির এমডি পদ পাওয়ায়, অন্তবর্তী সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আকাশে-বাতাসে।