শেরপুর কারাগার সচল হয়নি এখনও, পলাতক ৪০০ আসামি
ডেস্ক: হাসিনা সরকারের পতনের দিন হামলা–ভাঙচুরের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শেরপুর জেলা কারাগারটি দেড় মাসেও সচল করা যায়নি। কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৫১৮ জন হাজতি ও কয়েদির মধ্যে এখনও প্রায় ৪০০ জন পলাতক রয়েছে।
৫ অগাস্ট শেরপুর জেলা কারাগারে হামলা–ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর কারাগারের জেলার লিপি রানি সাহা বাদী হয়ে ১০–১২ হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন। পলাতক হাজতি–কয়েদিদের এখন পর্যন্ত ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন; উদ্ধার হয়েছে নয়টি অস্ত্র।
কারাগার সচল না থাকায় নতুন করে আটক আসামি পাঠাতে হচ্ছে পাশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংস্কার কাজ শেষ করে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কারাগার আবার চালু করা সম্ভব হবে।
কী ঘটেছিল
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দিন ৫ অগাস্ট বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শেরপুর জেলা কারাগারের সামনে জড়ো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগারের কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ সব কারারক্ষী বেরিয়ে যান।
ওই অবস্থায় প্রায় ৮–১০ হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা, রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কারাগারের প্রধান দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তারা ৫১৮ জন বন্দিকে বের করে আনে। ওই বন্দিদের মধ্যে ১০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং ৭০–৮০ জন বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রয়েছে। আর বাকিরা বিচারাধীন ও তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলার আসামি।
হামলাকারীরা কারাগারের ৬১টি অস্ত্রের মধ্যে নয়টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দিদের মজুত করা খাবার, কারাগারের বিভিন্ন মালামালসহ টাকা–পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে কারাগারের মূল্যবান রেকর্ডপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহায়তায় কয়েকটি অস্ত্র রক্ষা করা সম্ভব হয়। পরে কারাগারের ফটক, কারারক্ষীদের ব্যারাক, কারাগারের সুপার ও জেলারের অফিস কক্ষ ও বাসভবনের আসবাবপত্র, রান্নাঘর ও ক্যান্টিনও পুড়িয়ে দেয়। ভাঙচুর করা হয় আসামিদের ওয়ার্ড, কনডেম সেল ও কারা হাসপাতালে। ফলে পুরো জেলা কারাগার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
ঘটনার কয়েকদিন পর কারাগারের জেলার বাদী হয়ে ১০–১২ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এদিকে জেলা কারাগারের লুট হওয়া অস্ত্রসহ মালামাল ফেরত বা অবস্থান জানানোর জন্য স্থানীয় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করা হয়। এরপর লুট হওয়া নয়টি অস্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল ফেরত পাওয়া যায়। তবে ঘটনার দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কারাগার সচল করা যায়নি।
শেরপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. হুমায়ুন কবীর খান বলেন, “ঘটনার পরপরই কারা অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে কারাগার দ্রুত চালু করতে স্থানীয় গণপূর্ত বিভাগকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা খুব দ্রুতই মেরামত–সংস্কারের কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।”
কারাগার থেকে লুট হওয়া নয়টি অস্ত্রই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে কিছু গুলি পাওয়া যায়নি। পলাতক হাজতি–কয়েদিদের মধ্যে এরই মধ্যে ১২৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন জামিন পেলেও ২৬ জনকে পাশের জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে আটক আসামিও পাঠাতে হচ্ছে সেখানে।”
কারাগার সচল করার বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার মাহবুবুর রহমান বলেন, “কারাগারের মেরামত ও সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করতে নানা প্রক্রিয়ার কারণে সময় নিতে হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সম্পন্ন হলেও আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।”
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেছেন, “ধ্বংসস্তূপ থেকে কারাগারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে সংস্কার কাজ শেষ করে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলা কারাগার সচল করা সম্ভব হবে।”
এর মধ্য দিয়ে কারাগারকেন্দ্রিক নানা সমস্যারও অবসান ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।