গোপালগঞ্জের নজরুল ১১ হাজারে চাকরি শুরু করে ১২ কোটি টাকার সম্পদ
ডেস্ক : ১৩ বছর আগে ১১ হাজার টাকা বেতনে সেকশন অফিসার হিসেবে চাকরি শুরু করেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সহকারী রেজিস্ট্রার নজরুল ইসলাম হীরা। চাকরিজীবনে বেতন-ভাতা মিলিয়ে অর্ধকোটি টাকা উপার্জন না করলেও নামে -বেনামে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
চাকরির শুরুতে একটি টিনশেডের ঘর থাকলেও সেখানে এখন পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল ভবন। আর এতকিছু করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহিষ্কৃত সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
বর্তমানে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হয়ে পলাতক নজরুল ইসলাম হীরা। গত তিন মাস অফিস না করেও নিচ্ছেন বেতন ভাতা। নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, এটি দুদক আইনের ২৭ এর ১ ধারায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধ। অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র বলছে, গত ১৩ বছরের চাকরিজীবনে নজরুল ইসলাম বেতন-ভাতা মিলিয়ে ৩৫ লাখের মতো টাকা আয় করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার হাতিয়ে নেওয়া, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্য করে গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। গোপালগঞ্জশহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নজরুল ইসলামের পেছনে ছিল লেকু গাজীর হাত। তিনি সেই প্রভাবে চলতেন। ২০১৯ সালে তৎকালীন ভিসির আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌষ্য কোটার নিয়ম ছিল। তিনি কামাল ইবনে পাশা নামের একজনকে এফিডেভিড করে ভাগনে পরিচয় দিয়ে কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি করেন। বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার হাতিয়ে নিজেদের নামে নিয়েছেন। ফার্নিচার ক্রয়ের টেন্ডার নিয়ে নিম্নমানের ফার্নিচার কিনে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার চুরির ঘটনায়ও তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও তদন্ত কমিটিকে লেকু গাজীর মাধ্যমে প্রভাবিত করে নিজেকে নির্দোষ সাজিয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘হীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর প্রভাবে যা ইচ্ছা তাই করছেন। অবৈধভাবে গণভবন থেকে তদবির করিয়ে নিজের পদোন্নতি নিয়ে সহ-রেজিস্ট্রার পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। গোপালগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়ে করেছেন নিয়োগ বাণিজ্য। তিনি হাফিজুর রহমান লিকুর কাছের লোক হওয়ায় অনেক কিছু করতে পারতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোরাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। ছুটির আবেদন করেছিলেন। তবে সেটি ভিসি স্যার এখনো গ্রহণ করেননি। বর্তমান তিনি তার বেতন-ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, ওই কর্মকর্তার ছুটির আবেদন এখনো গ্রহণ করা হয়নি। তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ওই কর্মকর্তা যদি চাকরিজীবনে আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পদের মালিক হন, তাহলে দুদক আইনের ২৭ এর ১ ধারায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অপরাধ। অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নজরুল ইসলাম বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, মাদারীপুরে তিন কাঠার একটি প্লট রয়েছে। তবে বেদগ্রাম কোনো জমি কেনা নেই। চাকরির শুরুতে বেতন স্কেল ১১ হাজার হলেও আমি ভাতা পেতাম।
তিনি বলেন, চাকরির শুরুতে টিনশেডের ঘর ছিল। পরে আমরা উপার্জন করে বাড়িটি বানিয়েছি। ওই জমিটি আমার মায়ের। আমার সম্পর্কে না জেনে কিছু বলা যাবে না। আমি অফিস থেকে কত টাকা লোন নিয়েছি তথ্য নিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে।
অফিস না করে বেতন নিচ্ছেন কীভাবে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছুটির আবেদন করেছি। মায়ের অসুস্থতা আর মিথ্যা মামলার কারণে অফিস করা হচ্ছে না। কিছুদিনের মধ্যেই অফিস শুরু করবো।’
সূত্র: জা.নি